July 8, 2025, 6:26 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
লন্ডনে সফরত বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন স্যার কিয়ার স্টারমার। বৃটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
লন্ডন সফররত বাংলাদেশের নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার অপসারিত সরকারের সময় পাচার হওয়া শত শত কোটি ডলার উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগ্রহ করা।
এদিকে, অন্তর্র্বতীকালীন নেতা মুহাম্মদ ইউনূস পত্রিকাটিকে বলেন, যুক্তরাজ্যের উচিত “নৈতিকভাবে” বাংলাদেশের নতুন সরকারকে সহায়তা করা, যাতে “চুরি হওয়া” এই অর্থ উদ্ধার করা যায়—যার একটি বড় অংশ এখন যুক্তরাজ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ।
তবে ইউনূস জানান, স্টারমার এখনও তার সঙ্গে দেখা করতে সম্মত হননি।
“তার সঙ্গে আমার সরাসরি কোনো কথোপকথন হয়নি,” বলেন ইউনূস। তবে তিনি যোগ করেন, “আমার কোনো সন্দেহ নেই যে স্টারমার আমাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবেন।”
তিনি বলেন, “এটা চুরি হওয়া অর্থ।”
যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, বর্তমানে স্টারমার ও ইউনূসের মধ্যে কোনো সাক্ষাৎ হওয়ার পরিকল্পনা নেই এবং এ বিষয়ে তারা আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
যদিও ইউনূস বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার ইতোমধ্যে এই অর্থ খুঁজে পেতে কিছু সহায়তা করছে, তিনি মনে করেন যুক্তরাজ্যের উচিত “আইনগত এবং নৈতিকভাবে” আরও সক্রিয় সহায়তা প্রদান করা। সফরের লক্ষ্য হলো যুক্তরাজ্য থেকে “আরও উৎসাহী সমর্থন” সংগ্রহ করা।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূস গত আগস্টে ছাত্র-আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে একটি অন্তর্র্বতী সরকার পরিচালনা করছেন।
শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের চলমান তদন্ত কখনো কখনো যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে, স্টারমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং তৎকালীন দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছ থেকে সম্পত্তিসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়েছেন।
শেখ হাসিনা হলেন টিউলিপ সিদ্দিকের খালা। সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বর্তমানে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনরত সিদ্দিক এই সপ্তাহে ইউনূসের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে দেখা করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের ছড়ানো “ভুল বোঝাবুঝি” তিনি দূর করতে চান।
ইউনূস জানিয়েছেন, তিনি সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা করবেন না।
তিনি বলেন, “এটি একটি আইনি বিষয়… একটি আইনি প্রক্রিয়া,” এবং “এটি কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়।”
ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে তিনি “ক্ষমতাকে আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের জন্য অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগে পরিণত করেছেন।”
“এটা ছিল এক বিশাল লুটপাটের প্রক্রিয়া,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে এবং যুক্তরাজ্য ছিল “চুরি হওয়া” এই অর্থের প্রধান গন্তব্য।
ইউনূস আরও বলেন, কানাডা, সিঙ্গাপুর, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং মধ্যপ্রাচ্যেও এই অর্থের একটি অংশ পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সফর “শুধুমাত্র শুরু” এবং ভবিষ্যতে আরও সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। তার প্রশাসন যুক্তরাজ্যের “সব দিক থেকে”—ব্যবসা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে—সহায়তা চাইছে।
“আমরা গ্রেট ব্রিটেনের জনগণের সমর্থন চাই,” বলেন ইউনূস।
তার দল এখনো যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আশা রাখছে।
গত মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি শেখ হাসিনার একজন মিত্রের পুত্রের মালিকানাধীন লন্ডনের দুটি সম্পত্তির বিরুদ্ধে ফ্রিজিং অর্ডার জারি করেছে।
Leave a Reply